হাবিবুর রহমান সোহেল, নাইক্ষ্যংছড়ি: 
অবশেষে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ। যার কারনে ওই এলেকার ইয়াবা গডফাদারা গা ঢাকা দিয়েছে বলে আইন শৃংখলা বাহিনী সুত্রে জানিয়েছে। মঙ্গলবার (৫ জুন) বিকেল নাইক্ষ্যংছড়ি সদরসহ চিহ্নিত এলাকায় এই অভিযান চলে।
জানা গেছে, মাদকের ব্যবহার শূন্যের কোটায় আনতে ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ। শুরুতে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, বিছামারা, ব্যবসায়ী পাড়া, মসজিদ ঘোনা, চাকঢালা ও আশারতলী এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
মাদক বিরোধী অভিযানের বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি (তদন্ত) জায়েদ নুর জানান, সরকারের মাদক বিরোধী অভিযান সফল করতে সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ। মাদক দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সকল ধরনের মাদক দ্রব্যের ব্যবহার শূন্যের কোটায় আনা হবে। এলাকা মাদক মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। বিশেষ অভিযানে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জায়েদ নুরের
নেতৃত্বে অভিযানে অংশগ্রহন করেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানা সেকেন্ড অফিসার মোঃ জাফর ইকবাল, এস,আই মোঃ মোশারফ
হোসাইন ভুইয়া, এ এস আই, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এ এস আই মোঃ জাহেদ, এ এস আই রাজিব সিংও মহিলা পুলিশসহ অসংখ্য পুলিশ সদস্য।
এই দিকে বান্দরবান  জেলার মিয়ানমার সিমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি, বাইশারী ও পার্শ্ববর্তী রামু উপজেলার গর্জনিয়া, ঈদগড় এবং কচ্ছপিয়াতে কোনো চিহ্নিত ইয়াবাকারবারীর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়নি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। আর ওই সব ইয়াবা কারবীদের বিরুদ্ধে কোন অ্যাকশান নেওয়ার তৎপরতাও চোখে পড়েনি। যার কারনে ওই সব এলেকার সচেতন মহলের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে দেড়শতাধিক মাদক কারবারী ইতিমধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে। এদের প্রায় সবাই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো। কিন্তু ইয়াবার ‘আড়–তঘর’ মিয়ানমার সিমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি ও গর্জনিয়া কচ্ছপিয়াতে এখন পর্যন্ত কোনো ইয়াবাকারবারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না হওয়ায় সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছে। এই নিয়ে প্রতি নিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেইজ বুকে প্রতিবাদ জানাচ্ছে অনেকে। কিন্তু সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকলেও ইয়াবার ডিপো পয়েন্ট গর্জনিয়া কচ্ছপিয়ার তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবাকারবারীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি র‌্যাব ও পুলিশ। একই ভাবে রামুর ঈদগড় ও নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীর তালিকাভুক্ত কোনো ইয়াবাকারবারীকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে এলেকার সচেতন মহলের মুখে মুখে।
আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী বলছে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরতে হানা দেয়া হচ্ছে। বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ ও র‌্যাব। ছিঁচকে কারবারী নয়, গড়ফাদার ধরতেই টার্গেট নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাঁড়াশি অভিযান শুরুর আগে নাইক্ষ্যংছড়ি, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড় ও ইশারীসহ পুরো এলেকার চিহ্নিত ইয়াবাকারকারীরা প্রকাশ্যে ছিলো। অভিযানের খবর প্রচার হওয়ার সাথে সাথে সবাই গা ঢাকা দিয়েছে।
সাধারণ লোকজন বলছেন, তালিকাভুক্ত ইয়াবাকারবারীরা গা ঢাকা দিলেও তারা দূরে কোথাও যেতে পারেনি। এলাকাভিত্তিক গোপন স্থানে আত্মগোপন করে আছে। র‌্যাব-পুলিশ তল্লাশী চালালে তাদের অনেককে গ্রেফতার করতে পারবে। তবে অনেকে আবার সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে পালিয়ে গেছে ও এখনও যাচ্ছে বলে খবর এসেছে। অনেকে বোটে করে গভীর সাগরে নিরুদ্দেশ হয়েছে।
এই বিষয়ে কথা বলতে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আলমগীর জানান, তাদের কাছে কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ নাই, তবে কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলীর সাথে যোগাযোরোগ করা হলে তিনি জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা জাতির শত্রু।তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওওতায়রী আনা হবে।
কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুমেন মন্ডল জানান,তারা সব সময় নতুন নতুন তালিকা করে থাকেন।রামু উপজেলার আংশিক তালিকা তৈরী হয়েছে।নাইক্ষ্যংছড়ি সহ রামুর বাকি তালিকা সহসা তৈরী করে কঠোর অপারেশন চালানো হবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান,কক্সবাজার জেলা প্রশাসন যুদ্ধ ঘোষনা করেছে।সমস্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।